বাইরে প্রচন্ড বাতাস বইছে৷ মনে হচ্ছে কালবৈশাখী হবে। এমন দিনে এমনিতেই কেন জানি মনটা খারাপ থাকে মিসেস সায়রার। 

বাতাসের সাথে ঘরের ভেতর ধুলোবালি ঢুকে একাকার। ধুলোবালি ঢুকছে দেখে মিসেস সায়রা দৌড়ে এসে ঘরের সকল দরজা জানালা বন্ধ করা শুরু করলেন। ইতোমধ্যে সব কিছুতে ধুলোবালির স্তর দেখা যাচ্ছে। কি আর করা পরিস্কার তো করতে হবে। মিসেস সায়রা একে একে পরিস্কার করা শুরু করলেন। পুরোনো ঘুনে ধরা কাঠের আলমিরাটি পরিস্কার করতে যেতেই সেখান থেকে পুরোনো একটি ছবির অ্যালবাম মাটিতে পড়লো। তিনি অ্যালবামটি তুলে পরিস্কার করে নিয়ে এক ঝলক দেখে নিলেন। সাথে সাথে মনে হলে বাতাসের গতিতে পুরোনো কোন নস্টালজিয়া তার মনকে আঘাত করলো। স্মৃতির অ্যালবাম তাকে সেই সময়ে নিয়ে গেল যখন তার সন্তান সাজ্জাদ তাদের সাথে থাকতো। মিসেস সায়রা একে একে  অ্যালবামের সব গুলো ছবি দেখতে শুরু করলেন। ছবি গুলো দেখতে দেখতেই তিনি নস্টালজিক হয়ে পড়লেন। 

.

তখন সাজ্জাদ অনেক ছোট। ক্লাস ফাইভে পড়ে মাত্র। আজাদ সাহেব অফিসের বার্ষিক বনভোজনে পরিবার নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটি তাদের একত্রে প্রথম দূরে কোথাও যাওয়া।

তপ্ত দুপুর বেলা। সেন্টমার্টিনের বিচে মিসেস সায়রা, আজাদ সাহেব এবং সাজ্জাদ একত্রে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন। দিনটি সম্ভবত তাদের জীবনের অন্যতম সেরা একটি দিন ছিল। হাঁটু অব্দি পানিতে নেমে তারা তিনজন কি মজাটাই না করেছিলেন। যতক্ষণ পর্যন্ত পা থেকে মাথা অব্দি ভেজে নি ঠিক ততক্ষণ। এছাড়াও বিচে বালির প্রাসাদ বানানো, একসাথে ঘুড়ি ওড়ানো আরো কত কি। 

.

সমুদ্রের তরঙ্গের ঠিক যেমন কোন শেষ নেই ঠিক তেমনি স্মৃতির পাতা থেকে একের পর এক তার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল সাজ্জাদ চট্টগ্রামের বাইরে। ঢাকায় কর্পোরেট চাকরিটা তাকে পরিবার থেকে অনেক দূরেই নিয়ে গিয়েছে বলা যায়। মাঝখানে দুই রমজানের ঈদ আর এক কোরবানীর ঈদ গেল সাজ্জাদ ঘরে নেই৷ ঘরটা একদম ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়। 




.

মিসেস সায়রা এবং আজহার সাহেব সাজ্জাদকে খুব বেশি মিস করেন। একমাত্র ছেলে বলে কথা। করোনা মহামারী পুরো পৃথিবীটাকে কেমন বদলে দিয়েছে। করনোকালীন সময়ের আগে তাও মাঝেমধ্যে ছুটি নিয়ে দেখা করতে আসতো। কিন্তু এখন ছুটি পেলেও আসা সম্ভব নয়। হয়তো সব কিছু আবার আগের মত স্বাভাবিক না হলে সেটা সম্ভব নয়। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। মিসেস সায়রা তো মোটামুটি জোর করছিলেন সাজ্জাদকে চট্টগ্রাম আসার জন্য। কিন্তু সাজ্জাদ চাচ্ছেন না তার কারনে তার বয়স্ক বাবা মা ঝুঁকিতে পড়ুক। 

.

যদিও আজকাল Facebook,WhatsApp, Messenger এর যুগ। অনলাইনে চাইলেই কথা বলা যায়। কিন্তু মিসেস সায়রা এবং আজহার সাহেবের এতে মন ভরে না। তাদের কাছে সাজ্জাদ সেই আগের ছোট্ট ছেলেটি৷ তারা সাজ্জাদকে সশরীরে কাছে পেতে চান। আগে ছোট্ট সাজ্জাদকে যেভাবে করে কপালে চুমু খেতেন ঠিক তেমনটি করে সাজ্জাদের কপালে আদর করে চুমু দিতে চান। ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক আর হেডফোন সমস্যা ছাড়াই তার সাথে কথা বলতে চান। 

.

মিসেস সায়রা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ছবির অ্যালবামটি তার বুকের সাথে জোরে ঝাপটে ধরে অঝোরে কেঁদে দিলেন। 


নিশ্চয়ই পৃথিবী আবার আগের রুপে ফিরে আসবে। মুক্তি মিলবে এই অভিশপ্ত করোনা ভাইরাসের হাত থেকে। আর তখন সাজ্জাদের মত ছেলেরা তাদের বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসবেন কোন ভয় আর শঙ্কা ছাড়াই। ততদিন স্মৃতির অ্যালবামেই বেঁচে থাকুক বাবা মায়ের ভালবাসা৷ 



আপনি যদি এই ব্লগে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আমার বাকি লিখা গুলো পড়ে নিতে পারেন। আর হ্যাঁ অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কেমন লাগলো। আপনার মন্তব্য আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ধন্যবাদ। 😊