এখানেই শেষ নয়!

ইতো কয়েক মাসের আগের কথা। রিয়ান সবে মাত্র এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিল। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল খুব। তাই পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিনের মাথায়ই অন্যান্য বন্ধু বান্ধবদের সাথে নামকরা একটি কোচিং- ভর্তি হল। পড়াশুনাও জোরে সোরে করতে লাগলো । যেহেতু ছোট বেলা থেকেই ভাল স্টুডেন্ট ছিল তাই তাকে ঘিরে তার বাবা মা এবং আত্মীয় পরিজনদের আশার কোন কমতি ছিল না৷ দেখতে দেখতে তিন মাস পর ভর্তি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এল৷ একে একে সবকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিল সে। একে একে সব কটির রেজাল্টও আসতে লাগলো৷ প্রিপারেশন অনুযায়ী তার ধারনা ছিল একটা না একটাতে তো হয়েই যাবে৷ কিন্তু তার স্বপ্ন আস্তে আস্তে ধূলোয় মিশে যেতে লাগলো৷ কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই তার সুযোগ হল না৷ আস্তে আস্তে তার রঙিন স্বপ্ন গুলো অন্ধকারের কালো পাহাড়ে চাপা পড়ে গেল৷ আর এর সাথে সাথেই নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া বন্ধু বান্ধবদের সাথে দূরত্ব তৈরি হতে লাগলো। এক সময় যোগাযোগটাও বন্ধ হয়ে গেল৷ আর নিজের কাছের মানুষ গুলোও একচুল ছাড় দিল না৷ যে যেভাবে পারলো তার উপহাস করলো, তাকে ছোট করে কথা বলতে লাগলো। এতে করে রিয়ান মানসিক ভাবে একেবারে ভেঙে যায়। একসময় সে পুরোপুরি একা হয়ে যায়৷ একাকিত্ব তাকে আত্মহত্যার পথ খুঁজে নিতে বাধ্য করে!

.

ডিপ্রেশন!

শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। বলা হয়ে থাকে Depression is the biggest pandemic! আর কথাটা একেবারে যথার্থ। প্রতি বছর এর বশবর্তী হয়ে সারাবিশ্বে প্রান হারায় লাখো মানুষ। আমরা হয়তো অনেকে বুঝতে পারি না ডিপ্রেশন শব্দটির গভীরতা কতটুকু। এটা আপনি তখনই অনুভব করতে পারবেন যখন আপনি নিজে ফেইস করবেন। এটা এমন একটা অবস্থা যখন আপনি খাদে পড়ে গেলে বাচানোর জন্য দড়ি ফেলবে অনেকেই কিন্তু সেটা আপনার নজরে আসবে না। এটার লক্ষন একেক জনের একেক রকম হয়ে থাকে। সোজা ভাষায় এটা একটা রোগ৷ এটার জন্য অবশ্যই ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন। একজন সেলিব্রিটি ডিপ্রেশন থেকে আত্মহত্যা করকে হয়তো সবাই তাকে নিয়ে মাতামাতি করবে৷ কিন্তু আপনার হলে কে বলবে?

.

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর থেকে মুক্তির উপায় কি? নিজেই একটু চেষ্টা করলেই পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

আপনি হয়তো সাময়িক ভাবে হতাশ হয়ে যেতেই পারেন। এর থেকে বড় কোন পদক্ষেপ নিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু কখনো কি যে মানুষ গুলো আপনাকে ভালবাসে তাদের কথা ভেবে দেখেছেন? আপনার ছোট্ট ছোট্ট খুশি গুলোকে তথাকথিত সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদিতে না খুজে নিজের মাঝে খুজুন, নিজের আপন মানুষ গুলোর মাঝে খুজুন। আমরা অনেক সময় বেশি জাজমেন্টাল হয়ে যাই। অন্যের সাফল্যের সাথে তুলনা করে সুখের মাপকাঠি ঠিক করি। একেক জনের চিন্তাধারা ও গল্প একেক রকম। ওর তো এটা আছে আমার কেন নেই এমন ধরনের চিন্তা ধারা এবং হীনমন্যতা থেকেই মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। তার চেয়ে নিজের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থেকে নিজেকে কিভাবে আরো যোগ্য করে তোলা যায় সেই দিকে মনোনিবেশ করলে দেখা যাবে আসলেই ভাল থাকা যাচ্ছে। আপনি আপনার জীবনকে মূল্য দেবেন, আপনার চারপাশের মানুষ গুলোকে মূল্যায়ন করবেন দেখবেন আপনি অন্তর থেকে খুশী হবেন৷ সকল নেগেটিভিটি অপনা আপনি চলে যাবে৷ আর যদিও কখনো ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরুও করেন কখনো নিজের মাঝে চেপে রাখবেন না। আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষটির সাথে শেয়ার করুন৷ সবসময় মনে রাখবেন, এখানেই শেষ নয়!




 

আপনি যদি এই ব্লগে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আমার বাকি লিখা গুলো পড়ে নিতে পারেন। আর হ্যাঁ অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কেমন লাগলো। আপনার মন্তব্য আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ধন্যবাদ। 😊

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ