টার্নিং পয়েন্ট

ভাগ্যের  নির্মম পরিহাস কেউ ঠেকাতে পারে না। কখন যে কার ভাগ্যে পরিবর্তন আসতে পারে সেটি সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এই ধরণীর আর কেউ জানে না। কখনো কখনো কোন অসহায় মানুষ কোন ভালো  মানুষের সহায়তায় তার জীবন পরিবর্তন করতে পারে। আজ  ঠিক এমনি এক গল্প বলবো। গল্পটি পড়ে হয়তো আপনার কোন বাংলা সিনেমার কাহিনি মনে হতে পারে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত এবং এই গল্প থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

ইমন নামের এক ছোট্ট বালক ছিল। । যখন সে ক্লাস ফোর এ পড়ে তখনই সে তার বাবাকে হারায়। অভাবের সংসারে একমাত্র তার বাবাই ছিলেন উপার্জনকারী। তার বাবা লবণ এর ফ্যাক্টরীতে কাজ করতেন। কিন্তু, হঠাৎ তার মৃত্যুতে ইমনের লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। বাধ্য হয়ে তাকে মেনে নিতে হয় তার ভাগ্যকে। সংসারের হাল ধরার মত আর কেউ নেই। আছে শুধুমাত্র একটি ছোট্ট বােন, মায়ের মুখের দিকে চেয়ে ইমনকে নামতে হয় জীবিকার তাগিদে। 

এক লবণ ব্যবসায়ী শফিক সাহেব ইমনকে তার বাসায় আশ্রয় তথা কাজ দেয়। ইমন ও কাজে লেগে পড়ে। সে নিরলস ভাবে কাজ করতে লাগল। তার মনিব শফিক সাহেব ছিলেন খুবই ভালাে মানুষ । এমন মনিব সহজে কারো ভাগ্যে জোটে না। একদিন মনিবের বাসায় এক মেহমান বেড়াতে আগে। ইমনের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে চলে যাওয়ার সময় তিনি তাকে একটি পাঁচ টাকার নােট দেন। তখন আবার শহরে সবাই লটারির টিকিট কেনায় ব্যস্ত। ইমন ভাবল পাঁচ টাকায় টিকিট কিনলে কেমন হয়। যদিও বা সে টিকিট কি জিনিস ভালাে ভাবে জানতো না। 



সে তার টিকেটটি মনিবের স্ত্রীর কাছে জমা দিল। তার মনিব ও ছয়টি কিনেছিল। হঠাৎ বাড়ি থেকে খবর এল যে, ইমনের মা খুবই অসুস্থ। ইমন ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গেল। এরই মধ্যে লটারির টিকেট এর ফলাফল দিল। সবার চোখ খবরের পাতায়। ইমনের মনিব ও দেখছিল। সে খবরের কাগজ রেখে দেওয়ার সময় মনে পড়ল ইমনের টিকিট এর কথা। তার স্ত্রীকে বলল এনে দিতে। সে যখন দেখল তখন অবাক হল। কারণ ইমন সবার চোখকে ফাকি দিয়ে প্রথম পুরস্কার জিতল। মনিবের আনন্দের সীমা নেই। প্রথম পুরস্কার ছিল একটি জাহাজ । মনিব তাড়াতাড়ি ইমনকে খবর দিতে চাইল। কিন্তু মনিবের স্ত্রী কু-পরামর্শ দিল । সে বলল ইমনকে তাে তারা না জানালেও পারে । প্রত্যুত্তরে শফিক সাহেব তাকে বলল, “তােমার মত স্বার্থপর মানুষ দুনিয়ায় আর দুটো নেই । কি নেই আমার? দুটো লবনের ফ্যাক্টরী, নিজস্ব বাড়ি, গাড়ি আর কী চাও তুমি? আমি পরকালে আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব। তাছাড়া ছেলেটা অনেক অসহায়। এত মানুষ লটারীর টিকিট কিনল কিন্তু কেউ পেল না কেন? কারণ সৃষ্টিকর্তা তাকেই দিয়েছে। এতে শুধুমাত্র তারই হক থাকা উচিত।” শফিক সাহেবের কথা শুনে তার স্ত্রী ভুল বুঝতে পারল এবং তাড়াতাড়ি ইমনকে ডেকে পাঠাল। ইমন আসলে শহরের সব মান্য গণ্য লােকের উপস্থিতিতে ডি,সি তাকে প্রাইজ দিলেন। কিন্তু ইমন বলল সে জাহান্ডা বিক্রি করে দেবে অর্থাৎ সে টাকা নিবে। জাহাজ বিক্রি করে দেওয়া হল। এতে প্রায় দুই কোটি টাকা পাওয়া গেল, ইমন তার মনিবের হাতে এই টাকা তুলে দেয়। কারণ আপন বলে তার কেউ তেমন ছিল না। মনিব ও টাকা নেন এবং তার জন্য কিছু করার প্রত্যয় করেন। ইমনকে জিজ্ঞাসা করা হল যে তুমি কি চাও? তখন সে বলল যে সে পড়ালেখা করতে চায় । আজ 'ইমন পড়ালেখা করে অনেক বড় হয়েছে। এদিকে শফিক সাহেব ইমনের নামে আরো তিন চারটে ফ্যাক্টরী এবং অনেক গুলাে জায়গা জমি কিনে রাখেন এবং বাকী টাকা ব্যাংকে জমা রাখেন, এক সময় শফিক সাহেবের বিল্ডিং এ ইমন তার মা ও বােনকে নিয়ে আসে। কিছুদিনের মধ্যে বােনকে বিয়ে দেয়। শফিক সাহেব নিজের মেয়েকে তুলে দেন ইমনের হাতে এবং সকল সম্পত্তি তাকে বুঝিয়ে দেন। এভাবে ইমন ধীরে ধীরে আরাে উন্নতি করতে লাগল। ইমন এখনাে ভাবে  কী করে সে এত দূর এল। আসলে সেই লটারীটাই ছিল তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। সেই পাঁচ টাকার লটারী আজ কোটি কোটি টাকার সম্পদে পরিনত হয়েছে।


সাফল্য সকল মানুষের জীবনে হুট করেই আসে না। কেউ হয়তো খুব সহজেই সাফল্য পেয়ে যায়। আর কারো কারো হয়তো অপেক্ষা করতে হয় সঠিক সময়ের। আর যখনই সৃষ্টিকর্তা সেই সঠিক সময় কাকে কখন কিভাবে দান করবেন আমরা কেউ জানি না। তাই আমাদের সবারই উচিত ধৈর্য্য সহকারে সেই সঠিক সময়ের অপেক্ষা করা৷ 



বিদ্রঃ গল্পটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে ২০১৩ সালে রচিত। রংপুরের কোন এক ইমনের গল্প। আমার এক দাদুর মুখে শোনা।যদিও গল্পের প্রয়োজনে চরিত্র গুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। 



আপনি যদি এই ব্লগে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আমার বাকি লিখা গুলো পড়ে নিতে পারেন। আর হ্যাঁ অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কেমন লাগলো। আপনার মন্তব্য আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ধন্যবাদ। 😊


👉এখানেই শেষ নয়!

👉ভালোবাসার শেষ প্রহর

👉টার্নিং পয়েন্ট

👉নিশ্চুপ ভালোবাসার গল্প

👉কল্পনারীর সাক্ষাত (পর্ব-১)

👉কল্পনারীর সাক্ষাত ( পর্ব-২)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ